মন পড়ে রয়
মেঘের দেশ মোঙ্গোলিয়ায়
ভবঘুরে জীবনে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হলো এখানে এসে। এ এক মজার দেশ। এ এক বৈচিত্র্যময় মজার দেশ। নদী, হ্রদ, বরফে মোড়া পাহাড়, মরুভূমি, চারণভূমি আর তার সঙ্গে রয়েছে বিচিত্র আস্তানায় থাকা মানুষ, গ্রাম নগর শহরে। এখানকার বিচিত্র প্রকৃতিতে রয়েছে যেমন এক মাদকতা তেমনি এখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় রয়েছে বেঁচে থাকার নানা কাহিনী।
১৪ই জুন ২০২৩
হাওড়া থেকে রওনা হলুম দিল্লির উদ্দেশ্যে। কোলকাতা থেকে সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই মাঙ্গলিয়ার রাজধানী উলানবাটরে তাই দিল্লি হয়ে যেতে হবে তাও অনেক ঘুরপথে ইস্তাম্বুল হয়ে। চীন হয়ে গেলে পথ অনেক কম হয় কিন্তু ঝামেলাও অনেক বেশী। অগত্যা এই পথে।
হাওড়া থেকে নেতাজী এক্সপ্রেসে পুরোনো দিল্লি, সেখান থেকে দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ভোর ছটা কুড়ি মিনিটে টার্কিস এয়ারলাইনসের টি কে ৭১৭ বিমান। ছ'ঘন্টা পঞ্চাশ মিনিটের যাত্রায় পৌঁছব ইস্তাম্বুল।
ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্ট যেমন আধুনিক তেমনি বিশাল। ইস্তাম্বুলে সাড়ে সাতঘন্টা অপেক্ষার পর আবার টি কে ২৩৬ টার্কিস এয়ারলাইনসের বিমানে যাব মাঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটরের চেঙ্গিজ খান বিমানবন্দরে।
চেঙ্গিজ খানের নামটা শুনলেই শরীর কেমন শিহরিত হয়। সেই ক্লাস এইটের ইতিহাস বইতে পড়ে ছিলুম ওনার কথা প্রথম। আজ সেই চেঙ্গিজ খানের দেশে যাব ভাবতে কেমন লাগছে।
সন্ধ্যে ছটা দশ মিনিটে ছেড়ে পরদিন সকাল সাতটায় পৌঁছলুম উলানবাটর। বেশ বড় বিমানবন্দর। খুব সাজানো গোছানো চেঙ্গিজ খান এয়ারপোর্ট।
এখানে ইমিগ্রেশন পর্ব শেষ করে রওনা দিলুম হোটেলের উদ্দেশ্যে। মাঙ্গোলিয়ার এজেন্টের গাড়ী চলে এসেছে এয়ারপোর্টে। তার গাড়ীতে চলে এলুম নির্ধারিত হোটেল হোরিকাতে নয়, নিয়ে গেল উলানবাটরের অন্য আর একটি সুন্দর হোটেলে।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখি ভারতবর্ষ থেকে আমরা এগারোজন যাত্রী এসেছি আর আমাদের নেতৃত্বে আছেন রতনদা অর্থাৎ রতনলাল বিশ্বাস (রতনলাল বিশ্বাস ) সেই বিখ্যাত ভূপর্যটক। আমরা মাঙ্গোলিয়ার সব গুরুত্বপূর্ন স্থান দেখে নিতে চেষ্টা করব এবারে। এমনকি এখানকার বিখ্যাত নাদাম উৎসব পর্যন্ত। মাঙ্গোলিয়ায় থাকব সতেরো জুন থেকে চোদ্দোই জুলাই পর্য্যন্ত।
পর্ব ২
বিকেলে উলানবাটর শহর কিছুটা হেঁটে ঘুরে নিলুম। খুব চওড়া রাস্তা হোটেলের সামনে দিয়ে গেছে, সেটা ধরেই চলেছি। রাস্তায় তেমন মানুষ বা গাড়ীর ভীড় নেই এখানে। ট্রলি বাস আর ডবলডেকার বাস চলে এখানে। ফুটপাতে চলে মনো সাইকেল। খুব ঝাঁচকচকে শহর, রাজধানী যেমন হয় তেমনই। সিগন্যাল ব্যবস্থা খুব ভাল, কেউই অমান্য করে না। ফুটের পাশে ফল সবজির দোকান রয়েছে। অনেক মলও আছে রাস্তার দুধারে। বোঝা যায় উচ্চবিত্ত মানুষের বাস এখানে। কিছুটা হেঁটে পেলুম একটা ছোটো নদী। তার দুপাশে রয়েছে আবাসন আর
কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স। এরই মাঝে চোখে পড়ল রুশ স্থাপত্যে গড়া সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স। এরই মাঝে চোখে পড়ল রুশ স্থাপত্যে গড়া সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
কাল সকালে চলে যাব প্রায় সাড়ে চারশো কিমি দূরে উলানবাটরের উত্তরপশ্চিম দিকে অবস্থিত "Amarbayasgalan" গুম্ফা দেখতে।
সন্ধ্যার আগেই হোটেলে ফিরে রাতের খাওয়া সেরে বিছানা নিলুম। এদেশে দিনের আলো থাকে প্রায় সতেরো ঘন্টা। আর ভারতে থেকে এখানের ঘড়ি প্রায় আড়াই ঘন্টা পেছিয়ে চলে।
সকালের নাস্তা হোটেল থেকেই দিয়েছে, খুবই ভাল খাবার। গাড়ী চলতে লাগল হাইওয়ে ধরে। দুপুর একটা নাগাদ খাওয়ার জন্যে গাড়ী থামল হাইওয়ের ধারে একটা উঁচু চারণভূমিতে। নীচে দিয়ে যাচ্ছে রেললাইন। মাইলের পর মাইল শুধু চারণভূমি সেখানে চরছে ভেড়া ছাগল আর গরু। কখনও হাইওয়ে থেকে বহুদূরে দেখা যাচ্ছে গ্রাম।
বিকেলে এসে পৌঁছলাম পাহাড়ে ঘেরা এক অসাধারণ সুন্দর উপত্যকায়। এখানেই রয়েছে মাঙ্গোলিয়ার সেই বিখ্যাত গুম্ফা। 1727-1736 মধ্যে এটি তৈরি হয়। Burenkhan পাহাড়ের কোলে cul-de-sac ভ্যালিতে Evin নদীর ধারে এটি এক অপূর্ব গুম্ফা। ২০৭ বাই ১৭৫ মিটার পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। মূল মন্দির ৩২ বাই ৩২ মিটার। এই মন্দিরে চীনা মঙ্গলিয়া আর তিব্বতের প্রভাব রয়েছে। তিরিশ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় এই গুম্ফা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এখন সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে।
আমাদের তাঁবু পড়ল Evin নদীর ধারে। শুরু হল রাতের খাবার রান্না। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি যে ট্রাভেলসের সঙ্গে এসেছি তারাই সব দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের আত্মীয়স্বজনরা এসেছেন। দুজন গাড়ী চালাচ্ছেন, এখানে সব গাড়ী লেফ্টহ্যন্ড ড্রাইভ আর বাকী দুজন নারীকর্মী তারা রান্নার দিক সামলাচ্ছেন। সকলের ব্যবহার অতি সুন্দর আর রান্নাও। তবে খাবার ভারতীয় নয় মাঙ্গোলিয়ান খেতে অসুবিধা হচ্ছে না। এখানে মাংস নানা ধরনের পাওয়া যায়। ডিম তো আছেই। সবজি তেমন পাওয়া যায় না তাই নিরামিশের চল কম। এরা মশলাবিহীন রান্না করে প্রায় সেদ্ধই। বিভিন্ন পশুর দুধ প্রচুর পাওয়া যায় তাই খাওয়ার কোনো অসুবিধা হয় না।
রান্না এতক্ষণে শেষ হয়ে গেছে বোধহয়। খেয়ে শুয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। কাল যাব বুলগান হয়ে মুরুণ। সেসব কথা জানাব পরের পর্বে।
পর্ব ৩
আজ খুব সকালেই বেড়িয়ে পড়েছি কারণ যেতে হবে প্রায় পাঁচশো কিমি বুলগান হয়ে মুরুণ। বুলগান একেবারে রাশিয়া লাগোয়া একটা শহর। সেখান থেকে মুরুণ শহরে। বুলগান শহরে আছে Selenge নদী, আসছে রাশিয়া থেকে। এখানে প্রায় বারো হাজার মানুষের বাস। একমাত্র পশুপালনই ভরসা। পথে পড়েছে কেবলই চারণভূমি। কমিউনিস্টদের আমলে রাশিয়া Darkhan শহরে বেশ কিছুটা শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে ছিল ৬০ সাল নাগাদ কিন্তু বুলগানে তেমনটা হয়নি। অন্যদিকে মরুণ শহর বেশ উন্নত।
সেখানে হাসপাতাল, স্কুল মিউজিয়াম, থিয়েটার সবই আছে। একটা বেশ বড় গুম্ফাও ছিল যা ১৮১০ সালে তৈরী হয়ে ছিল। ১৩০০ লামা ছিল এক সময় এখানে। ১৯৩৭ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ধ্বংস হয়ে যায়। এখন একটা ছোট আকারে আছে।
মুরুণ শহরে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ বাস করে। মুরুণ পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে যায় আমাদের। রাতটা এখানকার হোটেলে কাটিয়ে কাল চলে যাব Khuvsgul lake দেখতে। এই লেক হলো মাঙ্গোলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক। একে সিস্টার লেকও বলে মাঙ্গোলিয়ার মানুষ। মুরুণ থেকে একশো কুড়ি কিমি দূরে এই লেক। আমরা পথে নদীর ধারে দুপুরের খাওয়া সারলুম। শহর থেকে বেরিয়ে হাইওয়ে ধরে যখন গাড়ী চলে তখন কোনো সমস্যা নেই কিন্তু বেশীরভাগ সময়ই হাইওয়ে ছেড়ে নেমে পড়তে হচ্ছে চারণভূমিতে। সেখানে দূরে পাহাড় দিয়ে ঘেরা, আর শুধুই ধূ ধূ করছে মাঠ, রাস্তা বলতে কিছু নেই। কেবলমাত্র দিক নির্ণয় করে চলা। কখনও কখনও দিক ভুল হয়েও যাচ্ছে কিন্তু দক্ষ ড্রাইভার ভায়েরা আবার সঠিক যায়গায় ফিরে আসছে। বেশ রোমাঞ্চকর ব্যাপার হচ্ছে মাঝেমাঝেই।
Khuvsgul লেকের ধারে Gir Camp রাতে থাকলুম। এখানে থাকব দুটো রাত। এরপর যাব Khyarges লেক দেখতে। এখানে থাকতে হবে নিজেদের টেন্টে। টেন্ট ফেলা এবং তোলা দুটোই নিজেদের করতে হয়। তবু এই ব্যপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং।
লেকের জলে প্রচুর মাছ। একজন হুইল ছিপে মাছ ধরছিল। আমিও ওনার কাছ থেকে একটা হুইল ছিপ নিয়ে ছোট বয়সের অভ্যাসটা ঝালিয়ে নিলুম। বেশ কয়েকটা মাছ পাওয়া গেল। এগুলো ভীষণ সুস্বাদু। রাতের খাবারের সঙ্গে চলল প্রচুর মাছ ভাজা। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মেঘ ঘনিয়ে এলো। তখনও জানি না কি বিপদ ঘনিয়ে আসছে আমাদের জন্যে। পরের পর্বে লিখব সে কথা।
পর্ব ৪
এখানে রাত্রি আসে অনেক পরে। তাই রাতের খাওয়া সেরে নিলুম সাতটা নাগাদ। রোজই এই রকম হয়। আজ তোফা খাওয়া। লেকের থেকে মাছ ধরা হয়েছিল অনেক। সেগুলো ভাজা, অনেকটা চিকেন শুপ আর পাঁউরুটি। পশ্চিমের আকাশ তখন লাল হয়ে আছে। খাওয়া সেরে ছবি তুলব বলে এগোতেই ড্রাইভার সাহেব বললে, আগে যাবেন না মৌসম ভাল নেই। অগত্যা টেন্টে ঢুকে পড়লুম।
একটু পর শুরু হল বৃষ্টি তারপরই এলো ভয়ঙ্কর ঝড়। এমন ঝড় আমি মাঙ্গোলিয়ায় এর আগে পাইনি। চারিদিক অন্ধকার করে এলো প্রবল ঝড়। তাঁবু উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার উপক্রম। গাড়ী দুটোকে তাঁবুর সামনে এনে হেডলাইট জ্বেলে দিল যাতে অন্ততঃ বোঝা যায় বিপদটা কত গভীরে। মাঙ্গোলিয়ান সাথীরা বৃষ্টিতে ভিজে প্রত্যেকটা তাঁবু সামলাচ্ছেন আর চিৎকার করছেন, প্লিজ শুয়ে থাকুন, তাঁবু থেকে বের হবেন না।
কতক্ষণ এভাবে কেটেছে জানিনা, যখন ঝড় থামল বাইরে বেরিয়ে দেখি আমার টেন্টের কভার উড়ে গেছে, কিচেন টেন্ট উল্টে গেছে। সেই রাত্রি কোনো মতে কাটিয়ে পরদিন বেরিয়ে পড়লুম Khyarges Lake থেকে Ulaangom হয়ে Uvs Lake camp.
এখানে দুপুরের খাওয়া সেরে নিলুম। এই হ্রদ মঙ্গলিয়ার সবচেয়ে বড় হ্রদ। এই হ্রদের উওর-পূর্ব কিনায় রয়েছে রাশিয়ান ফেডারেশনের টুভা প্রজাতন্ত্র। লেক দেখা শেষ করে এখন চললুম Ulaangom শহরে। আজ ওখানেই রাত্রিবাস হোটেলে।
সুন্দর শহর এখন থেকে দেখা যায় দূরের বরফের পাহাড়। পরদিন সকালে টিফিন সেরে চললুম Ulaankhus Village প্রায় তিনশো কিমি দূরে। বেশ ভালোই লাগে কখনও শহর আবার গ্রামের মধ্যে থাকতে। পথ চলা কখনো হাইওয়ে তো কখনো চারণভূমি। এখানে শহরে যদি বা কিছু মানুষজন পাওয়া যায়, গ্রামে কয়েকটা ঘর মাত্র। ঘর বলতে ওখানকার ঐ Gir অর্থাৎ বড় আর শক্তিশালী তাঁবু। এই জায়গাটা ভীষণ ঠান্ডা কারণ এখানে রয়েছে Altai Raven Bogd Mountain, মঙ্গলিয়ার সবচেয়ে উঁচু বরফাবৃত পাহাড় আর তার বিখ্যাত হিমবাহ।
রাশিয়া চিন মাঙ্গোলিয়ার সীমান্তে রয়েছে 'ফ্রেন্ডশিপ পিক'। কাল যাব সেখানে। পরের পর্বে সেসব কথা লিখব।
পর্ব ৫
সাতাশ জুন বিকেলে Altai Tavan Bodg Mountain Ranger Station এসে পৌঁছলুম। অবাক হয়ে দেখলুম সামনেই বরফে মোড়া সুউচ্চ পর্বতের সারি। আমাদের তাঁবু ছিল একটু নিচুতে সমতল জায়গায়। সেখান থেকে খানিকটা হেঁটে ওপরে উঠেই দেখি একটা ঈগল। ক্রমশঃ সন্ধে হয়ে আসছে, বরফের চূড়ায় তখন শুরু হয়েছে রঙের খেলা। এখানে রাতের খাওয়া মিটিয়ে ফেলতে হয় সন্ধেতেই তাই খাওয়া সেরে তাঁবুতে ঢুকে পড়তে হয় দিনের আলো থাকতেই। ভীষণ জোরালো ঠান্ডা হওয়া বইতে শুরু করছে। তাই তাঁবুতে ঢুকে পড়া ছাড়া উপায়ও নেই।
পরদিন সকালে দেখি ড্রামের জল জমে বরফ হয়ে আছে। একটু ঠুকে বরফ ভেঙ্গে জল বার করতে হল। টিফিন খেয়ে গাড়ীতে উঠলুম। যাব Potanin Glacier দেখতে।
পথে অপূর্ব সুন্দরী লেক যার উপর ভাসছে বরফে চাদর। চেকপোষ্ট পেরিয়ে এসে পৌঁছলুম গ্লেসিয়ারের নীচে। সামনে দাঁড়িয়ে মাঙ্গলিয়ার সর্বোচ্চ শিখর 'ফ্রেন্ডশিপ পিক'। রাশিয়া চীন এবং মাঙ্গলিয়ার মৈত্রী স্বরূপ এই শৃঙ্গ। অনেক অনেক টুরিস্টের ভীড় এখানে। রোদে থাকলেও শীতে বেশ কাবু করছিল আমায়। ওখানে রয়েছে যেমন বৌদ্ধধর্মালম্বী মানুষদের তৈরী এক বিশাল মানে। সেখানে তারা পূজো করছে মোমবাতি ধূপ জ্বালিয়ে অন্যদিকে কিছু মানুষকে দেখলুম চলেছে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে গ্লেসিয়ারের দিকে। ধর্মীয় লোকাচার, প্রকৃতি, আর বিভিন্ন ধরণের মানুষের এমন মিলনক্ষেত্র আমাকে অভিভূত করে তুলল। অনেক অনেক দুর্লভ ছবি তোলা শেষ করে ফিরে এলুম তাঁবুতে। আজ রাতেও থাকব এখানে কাল চলে যাব khoton Lake দেখতে।
আঠাশ জুন
সকালে টিফিন সেরে গাড়ীতে উঠলুম।পথে নদী, লেক, নদীর সঙ্গম আর দুর্গম গিরিপথ পেরিয়ে বিকেলে চলে এলুম khoton Lake এর ধারে। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ে ঘেরা এই লেক। এখানে GER Camp এ থাকার ব্যবস্থা হলো। বেশ কিছু seagulls চোখে পড়ল লেকের জলে।
পরদিন চলে এলুম ঈগল হান্টার ভিলেজ। গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষের (গ্রামের মোড়লের মত) সঙ্গে কথা হল আমাদের। ওনাদের গীর টেন্টে থাকার ব্যবস্থা হলো আজকের মত। মাঙ্গলিয়ার গ্রামের চেহারা সব একই রকমের। মাত্র কয়েক ঘর বসতি। পশু পালনই একমাত্র জীবিকা এখানে।এখানকার শিশুদের লজেন্স আর বড়দের পেন দেওয়া হলো।
একটা পায়ে দড়ি বেঁধে রেখেছে এই বাড়ীতে। বাড়ীর মেয়েরা গরু ঘোড়া উটের দুধ দুইছে। প্রচুর দুধ হয় এদের। নিজেরা দুধ খায় আর কিছুটা ছানাও করে দেখলুম। সে রাতে আমরাও দুধ খেলুম ভুট্টার গুঁড়ো আর চিনি মিশিয়ে। তবে সেটা যে পরিচিত দুধ নয় তা ওর গন্ধ থেকেই মালুম হলো।
পোষা ঈগল দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা |
পরদিন সকালে গ্রামের দৈনিক কাজকর্মের কিছু ছবি তুলে রওনা হলুম Lolbo Lake এর উদ্দেশ্যে।
অনেক সময় সেদিন আমাদের পথ চলা। পথে বেশ বৃষ্টি হলো। পাহাড় থেকে নেমে আসা জলের ধারাগুলো প্রায় নদীর চেহারা নিয়েছে বৃষ্টির ফলে। প্রায় সন্ধ্যায় পৌঁছলুম লেকের ধারে। নিজেদের তাঁবু খাটানো হলো। অনেকদিন পরে আজ বাংলার রান্না খেলুম। মাঙ্গলিয়ার বোনদের ছুটি দিয়ে আমাদের সাথীরা রান্না করল ডিম ভাত। এতদিন ভাত পাইনি তাই আমি ভেতো বাঙ্গালী আজ পরম তৃপ্তিতে রাতের খাওয়া সারলুম। রাতে প্রচুর বৃষ্টি হতে লাগল। তাঁবুতে কোনোমতে রাত কাটিয়ে সকালে মেঘমুক্ত আকাশ পেলুম। গেলুম একেবারে জলের ধারে। প্রবল হাওয়ায় লেকের জলে বেশ বড় বড় ঢেউ উঠছে।
এই লেকের ধারেই মাঙ্গলিয়ার এ্যলান্স সৈন্য(রাশিয়া এবং চীন)আর বলশেভিকদের সাথে যুদ্ধ হয়েছিল হোয়াইট রাশিয়ানদের মাঙ্গলিয়াকে মুক্ত করার সময়।
আজ জুলাইয়ের এক তারিখ।
এবার চললুম শহরের দিকে। Bulghara বেশ বড় শহর। এখানে একটা Motel এ এসে উঠলুম। প্রায় চীন ঘেঁষা এই শহর। পায়ে হেঁটে ঘুরে নিলুম কিছুটা শহর। স্কুল, লাইব্রেরী, দোকানপাটে সাইনবোর্ডের লেখা দেখে বোঝো যাচ্ছিল এটা চীনা প্রভাবিত অঞ্চল।
আজ এ পয্যর্ন্তই থাক। এবার আমাদের লক্ষ্য গোবি মরুভূমি তবে তার আগে দেখে নেবো আরও কিছু শহর, গ্রাম, নদী আর অসাধারণ সব পার্বত্য অঞ্চল।
পর্ব ৬
No comments:
Post a Comment