Tuesday, August 29, 2023

বাংলা সাহিত্য সম্ভার।। শিবরাম চক্রবর্তী

বাংলা সাহিত্যের এক অমর স্রষ্ঠা শিবরাম চক্রবর্তী। 

ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস

সাইকেলে ভূপর্যটন

প্রথম বিশ্বযাত্রা (১৯৩১-৩৩)

রামনাথ সাইকেলে প্রথম বিশ্বযাত্রা করেন ১৯৩১ সালে। সঙ্গে এক জোড়া চটি, দু'টি চাদর ও তার সাইকেল। সাইকেলের কেরিয়ারে একটি বাক্সে সাইকেল মেরামতির সরঞ্জাম। সাইকেলের গায়ে লেখা 'রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড, হিন্দু ট্রাভেলার।' ৭ জুলাই ১৯৩১ রামনাথ সিঙ্গাপুরের কুইন স্ট্রীট থেকে এই বিশ্বযাত্রা শুরু করেন। সিঙ্গাপুরে চাকরিরত প্রবাসী ভারতীয়রা রামনাথকে সেদিন শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন। সাইকেলে চড়ে তিনি মালয়,শ্যাম, ইন্দোচীন, চীন, কোরিয়া, জাপান হয়ে কানাডায় পৌঁছান। ১৯৩৪ সালে তিনি গ্রামে ফিরলে গ্রামবাসীরা বানিয়াচঙ্গের ঐতিহাসিক এড়ালিয়া মাঠে এক বিশাল সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেন। উক্ত সভায় রামনাথ তার বিশ্বভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে 'বানিয়াচঙ্গকে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম' বলে উল্লেখ করেন।


দ্বিতীয় বিশ্বযাত্রা (১৯৩৪-৩৬)

১৯৩৪ সালে রামনাথ দ্বিতীয়বার বিশ্বযাত্রা করেন। সেবার তিনি আফগানিস্তান, পারস্য, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, তুরস্ক, বুলগেরিয়া, যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরী, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, জার্মানি, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স হয়ে বৃটেন পৌঁছান। ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডও তিনি সাইকেলে পরিভ্রমণ করেন। এই যাত্রায় তার শরীর ভেঙে গিয়েছিল। ১৯৩৬ সালে তিনি লন্ডন থেকে জাহাজে পোর্ট সৈয়দ হয়ে মুম্বই প্রত্যাবর্তন করেন। সুস্থ হয়ে তিনি শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর কাছে যান।


তৃতীয় বিশ্বযাত্রা (১৯৩৬-৪০)

রামনাথ তৃতীয়বার বিশ্বযাত্রা করেন ১৯৩৮ সালে। সেবার তিনি আফ্রিকা মহাদেশে পাড়ি দেন। মুম্বই থেকে তিনি জাহাজে মোম্বাসায় পৌঁছে সেখান থেকে সাইকেল যাত্রা শুরু করেন। তিনি কেনিয়া, উগান্ডা, নায়াসাল্যান্ড, রোডেসিয়া হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছান। এখান থেকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান; কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভালো লাগেনি। তিনি ১৯৪০ সালে দেশে ফিরে আসেন।

ভ্রমণ কাহিনী পিডিএফ 










Saturday, August 26, 2023

শারদীয়া দুর্গোৎসবের নেপথ্য কাহিনী

২৩শে জুন, ১৭৫৭ সাল – পলাশীর যুদ্ধ-এ নবাব সিরাজউদ্দৌলা’কে হারিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি‘র সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ বাংলার রাজা হয়ে বসলেন।

পলাশীর যুদ্ধ
লর্ড ক্লাইভ ও নবকৃষ্ণ দেব

ক্লাইভ চেয়েছিলেন এই বিজয় কে সেলিব্রেট করতে। কিন্তু তখনকার কলকাতায় না ছিল আজকের পার্ক স্ট্রীট অঞ্চলের মতন বিলাসবহুল হোটেল, না ছিল কোনো ‘ব্যাংকোয়েট হল’, না ছিল কোনো বড় গির্জা। ঈশ্বরের উপাসনা ছাড়া তো উৎসব তেমন জমে না! অগত্যা ক্লাইভ ঠিক করলেন যে তিনি ভিনদেশী দেবীর শরণাপন্ন হবেন।

এই যুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীর সংখ্যা ছিল অনেক – তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কলকাতার শোভাবাজারের নবকৃষ্ণ দেব। শোভাবাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নবকৃষ্ণদেব পলাশীর যুদ্ধের আগে ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুনশি; পরে হয়েছিলেন সুতানুটির তালুকদার – চার হাজারী মনসবদার। তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস-এর ব্যক্তিগত শিক্ষক (প্রাইভেট টিউটর) হিসাবে – হেস্টিংসকে ফারসী শেখাতেন।

পলাশির যুদ্ধ জয়ের মোচ্ছব আজ বাঙালির জাতীয় উৎসব

পলাশীর যুদ্ধের ফলে নবকৃষ্ণের কপাল গেল খুলে। ক্লাইভের সঙ্গ দিয়ে মীরজাফর, রামচাঁদ রায়, আমীর বেগ, জগৎ শেঠ আর নবকৃষ্ণ প্রমুখরা মিলে সিরাজের কোষাগার লুঠ করে কোটি কোটি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন। পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের ফলে নবকৃষ্ণ শুধুমাত্র ধনদৌলতই পান নি, সঙ্গে পেয়েছিলেন প্রভূত সন্মান আর ক্ষমতা।

১৭৬৬ সালে নতুন খেতাব পেয়ে নবকৃষ্ণ হলেন ‘মহারাজা নবকৃষ্ণদেব বাহাদুর’। পলাশীর রণাঙ্গনে মীরজাফর-এর বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটলে সেদিন যাঁরা সবচেয়ে বেশি উল্লাসিত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং কলকাতার নবকৃষ্ণদেব।

ক্লাইভ চেয়েছিলেন এই বিজয়কে সেলিব্রেট করতে।

———-

কিন্তু হিন্দুদের দেবীপূজা বসন্তকালীন দুর্গোৎসবের (বাসন্তীপূজা) তখন অনেক দেরি। ক্লাইভের পরামর্শে মুশকিল আসান করলেন নবকৃষ্ণদেব – বাসন্তীপূজাকে নিয়ে এলেন শরৎকালে। তবে নবকৃষ্ণ প্রথম অকালবোধন করেন নি। অতীতের বিভিন্ন গ্রন্থে নবকৃষ্ণের বহু আগে অকালবোধনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এরমধ্যে তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণের অকালবোধন পূজা উল্লেখ্য (রামচন্দ্রের অকালবোধনকে বাদ রাখলাম, কারণ আসল রামায়ণ বা ঋষি বাল্মীকি লিখিত রামায়ণে রামের দুর্গাপূজার কোনো বিবরণ নেই, কৃত্তিবাস ওঝা লিখিত রামায়ণে আছে)। তাই নবকৃষ্ণ নিয়ম ভেঙে কিছুই করেন নি – তবে অকালবোধনের পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য অবশ্যই ভিন্ন ছিল।

ব্রিটিশদের নেকনজরে সিদ্ধিলাভ, দুর্গা পুজো শুরু হল শোভাবাজার রাজবাড়িতে

নবকৃষ্ণ যেন আলাদিনের প্রদীপ ঘষে তাঁর চকমিলান রাজবাড়ীর একদিকে গড়ে তুললেন ঠাকুরদালান, আরেকদিকে নাচঘর। সর্বত্র বসানো হল বিদেশি মার্বেল পাথর। এল ঝাড়লণ্ঠন, দেওয়ালগিরি, রৌপ্যখচিত আঁটাসোঁটা, খাসগেলাস ও নিশান, দেওয়ালে বিদেশি তৈলচিত্র আর সীতাহরণের উডকাট। গড়ে উঠল একচালা প্রতিমা। প্রতিমার গা-ভর্তি সোনার গয়না ঝলমল করে উঠল। দুর্গার কেশদামে গুঁজে দেওয়া হয়েছিল ছাব্বিশটি স্বর্ণ নির্মিত স্বর্ণচাঁপা, নাকে তিরিশটি নথ, মাথায় সোনার মুকুট। প্রতিমা সাজাতে জার্মানি থেকে আনা হয়েছিল রাংতা। অশ্বপ্রতিম (গোধা) দুর্গার বাহনের গায়ে দেড়মাস ধরে সন্দেশের তবক বসানো হয়েছিল।

কৃষ্ণা-নবমীর দিন হয়েছিল বোধন। সেই থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত ব্রতী-ব্রাহ্মণেরা ঠাকুরদালানে বসে চণ্ডী, বগলা এবং বেদের সূক্ত পাঠ করেছিলেন। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় হয়েছিল বিল্ব-বরণ। সপ্তমীর সকালে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে আসা দুই ‘স্কচ হাইল্যান্ডার ব্যান্ড’ নিয়ে গঙ্গায় কলাবউ স্নান করানো হয়েছিল। অষ্টমীর দিন সন্ধিপূজার শুভমুহূর্তে এক এক করে জ্বলে উঠেছিল একশো আটটি জাগ-প্রদীপ। তারপরে তোপধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছিল সন্ধিপূজা – তখন ঠাকুরদালানে থিকথিক করছিল মানুষ।

দৈনিক নৈবেদ্য দেওয়া হয়েছিল তেইশ মণ চালের, ভিয়েনে রান্না করা সত্তর-আশি রকমের ভোগের মিঠাই। বিশেষ পদ হিসাবে তৈরি হয়েছিল বড় কামানের গোলাকৃতি মতিচুর।

সে’বছর নবকৃষ্ণদেব আর নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে শরৎকালীন দুর্গাপূজার মাধ্যমে ইংরেজদের বিজয় উৎসবটি পালন করেছিলেন। শোনা যায়, নবকৃষ্ণ দেবের পূজা নাকি চলেছিল একশো দিন ধরে।

তত্ত্বজ্ঞদের মতে এর আগে শারদীয়া দুর্গাপূজার বিশেষ চল ছিল না, ছুটকো-ছাটকা দু’তিনটি উদাহরণ ছাড়া, ব্যাপকভাবে হত বাসন্তীপূজা। সেনযুগে রাজারাজড়া আর দস্যু-তস্করেরা এই পূজা করতেন বসন্তকালে। যুদ্ধজয়ের জন্য রামচন্দ্র শরৎকালে অকালবোধন করেছিলেন বলে যে কিংবদন্তি আছে, বাল্মীকি রামায়ণে তা অনুপস্থিত। তাহেরপুরের ভূঁইয়ারাজা কংসনারায়ণ মোঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আগে শরৎকালে দুর্গাপূজা করেছিলেন বলে কিছু গ্রন্থে লিখিত আছে এবং জনশ্রুতি আছে, তবে তার সঠিক তথ্যপ্রমাণ নেই। ওদিকে আবার, রাজা সুরথ দুর্গাপূজা করেছিলেন চৈত্রমাসে, এখন যা বাসন্তীপূজা নামে খ্যাত। সুতরাং এই হিসেবে বলা যায় যে ক্লাইভই বঙ্গদেশে প্রথম জাঁকজমক করে শারদীয়া দুর্গোৎসবের প্রবর্তক

মজার বিষয় হল ক্লাইভ নিজে খৃষ্টান ও মূর্তিপূজার বিরোধী হয়েও স্রেফ নিজের স্বার্থে ‘হিন্দু-প্রেমিক’ সেজে নবকৃষ্ণের দুর্গাপূজায় একশো এক টাকা দক্ষিণা আর ঝুড়িঝুড়ি ফলমূল পাঠিয়েছিলেন। প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থে ইংরেজরা এ’দেশে দুর্গাপূজা কে উপলক্ষ করে গড়ে তুলেছিলেন এক অনুগ্রহজীবী তাঁবেদার সম্প্রদায়। নবকৃষ্ণের কাছেও দুর্গাঠাকুর ছিলেন উপলক্ষ মাত্র – ক্লাইভকে তুষ্ট করাই ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য। নবকৃষ্ণের দুর্গাপূজাকে অনেকে কোম্পানির পূজা বলে থাকেন। নবকৃষ্ণই কলকাতার প্রথম বাঙালি যিনি একজন আসল সাহেবকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। হাতির দাঁতের ওপর লেখা আমন্ত্রণ লিপিটি তিনি তৈরি করিয়েছিলেন ক্লাইভকে উদ্দেশ্য করেই। নবকৃষ্ণ ভালো করেই জানতেন মূর্তিপূজার বিরোধী খৃষ্টান ক্লাইভকে কেবলমাত্র দুর্গাঠাকুর দেখিয়েই মন ভরানো যাবে না। তাই বোধনের দিন থেকে সাহেবদের জন্য মদ্য-মাংস আর নাচ-গানের অঢেল আয়োজনও তিনি করেছিলেন।

ক্লাইভ হাতির পিঠে চেপে সঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পূজা দেখতে এসেছিলেন। ঠাকুর দালানের সামনে ছিল সাদা মার্বেল পাথরের সিঁড়ি – সিঁড়ি বরাবর কারুকার্য করা একটি নির্দিষ্ট আসনে এসে বসেছিলেন ক্লাইভ, তাঁর পাশের আসনে বসেছিলেন নবকৃষ্ণদেব বাহাদুর। রাজবাড়ীর মেয়েরা বসেছিলেন দালানের একপাশে চিকের ভেতরে কার্পেটের উপরে। পুরুষেরা ছিলেন চিকের বাইরে। ক্লাইভ সে’দিন পশুবলি সহ হিন্দুদের দেবীর পায়ে পুষ্পাঞ্জলিও দিয়েছিলেন। পূজার তিনদিন গভীর রাত পর্যন্ত মহাধুমধামের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত খানাপিনা-নাচগানের আসর চলেছিল। দেশওয়ালীদের জন্য ব্যবস্থা হয়েছিল কবিগান, তর্জা আর মর্জিনা-আবদল্লা’র যাত্রাগানের। ক্ল্যারিওনেট বাজনার তালে-তালে সারা রাত মর্জিনার নাচ আর দর্শকদের ‘এনকোর-এনকোর’ রব আসর মাত করে দিয়েছিল।

শোভাবাজার রাজবাড়ীর পূজায় আমন্ত্রিত খৃষ্টান পাদ্রী ওয়ার্ড সাহেব, এই দুর্গোৎসবের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখে গিয়েছেন, “চকমিলান প্রাসাদের মাঝখানে উৎসব প্রাঙ্গণ। সামনে পূজামণ্ডপ, পূর্বদিকের একটি ঘরে সাহেবীখানার বিপুল আয়োজন। হিন্দু নর্তকীদের নাচগান চলছে। চারিদিক ঘিরে কোম্পানির বাঘাবাঘা সাহেব-মেম অতিথিরা কৌচে বসে মৌজ করে তা দেখছেন।” শোনা যায়, ওয়ারেন হেস্টিংসও নাকি নাচ দেখতে হাতির পিঠে চেপে এসেছিলেন।

পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ী ইংরেজদের বদন্যতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় অতঃপর শহরে ও অন্যত্র শ্রেষ্ঠী মুৎসুদ্দি দালালরা পূজার নামে উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে গ্রামাঞ্চলের জমিদার ও মধ্যস্বত্ব ভোগীরাও সেই আনন্দ-উল্লাসে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। কলকাতার রাজা-বাবুদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল দুর্গোৎসবে সাহেব-সুবোদের কতটা খুশি করা যায় তা নিয়ে। বিপুল আড়ম্বর আর চূড়ান্ত আভিজাত্যের প্রতীক সেদিনের এই পূজার কলকাতা ইংরেজদের চোখে ‘পারফেক্ট প্যারাডাইস’ হয়ে উঠেছিল।


অবশ্য নবকৃষ্ণের আগে ১৬১০ সালে কলকাতার বারিশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার কলকাতায় প্রথম দূর্গাপুজার আয়োজন করেছিল। তবে ঐতিহাসিকদের মতকে প্রাধান্য দিয়ে যদি জব চার্নককেই কলকাতার পত্তনকারী ধরা হয় তবে ১৬৯০ এর ২৪ আগস্ট হলো এই সাবেকী কলকাতার জন্মদিন। অতএব সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের পুজোকে সেই অর্থে কলকাতার প্রথম পুজো বলা যাবেনা।











শারদীয়া দুর্গোৎসবের নেপথ্য কাহিনী

Thursday, August 24, 2023

অগ্নিযুগের স্বাধীনতা সংগ্রামী

ভারতের মুক্তি সংগ্রামে অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের অবদান অবিস্মরণীয়।



Tuesday, August 22, 2023

বইয়ের খোঁজখবর: 📚 বিষয়: দেশভাগ

Knowledge Hub: 📗 Where do nuts come from?

Different kinds of nuts

The hard-shelled fruits we call nuts differ widely in size and flavour. Walnuts, with their wrinkly, hard shells enclosed in a round, smooth husk are favourite in some countries. Long ago, Oriental princes send them as presents to rulers of the lands where the walnut trees didn't grow.
The chestnut, too, 


Continued...



















Saturday, August 19, 2023

মনের আয়নায়।। কবিতা সংকলন।। রবি রায়

রবি রায়

মাঝে মাঝে বেশরম ইচ্ছে জাগে মনে
কেউ আমার সকালের ঘুম ভাঙ্গাক এই বলে-
হ্যাঁগো, চা খাবে না,
অনেক যে বেলা হয়ে গেছে।
আমি ঘুম চোখে বলি-
আর একটু ঘুমিয়ে নি, চোখ খুলতে পারছিনা।
তারপর ধড়ফড় করে উঠেই পড়ি-
সকাল সাড়ে সাতটার ট্রেনটা ধরতে না পারলে
অপিসের হাজিরাখাতায় লেট সাইন পড়বে,
তিনটে লাল টিক মার্ক মানে মাস ফুরালে একদিনের বেতন কাটা যাবে,
বাজারের থলিতে টান পড়বে।

এখন অবশ্য আর কোন ভুবনের ভার নেই, দায় নেই দায়িত্ব নেই,
সপ্তাহ শেষে বাজার যাওয়া বা রাতে ফেরার পথে বাজার করা নেই,
বাজারের কোন খবরও রাখিনা,
জানিনা কোন ট্রেন কখন এল কখন গেল,
তবুও ভোরের আলো ফুটলেই ঘুম ঘাঙে, কাউকে ডাকতে হয়না,
শীতকালেও ঠাণ্ডা জলে চোখমুখ ধুই,
আগের মত আর বাটিভরা ঈষৎউষ্ণ জল রাখা থাকেনা,
নিজের চা নিজেই বানিয়ে খাই।

তবে আজও যেন অন্য এক ট্রেন ধরার আতঙ্ক তাড়া দেয়,
তাই ভোরে উঠেই বসে যাই ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণায়!
শুধু মাঝে মাঝে ভুল করে বেশরম ইচ্ছে জাগে-
সকালের চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কেউ যদি ভুল করেও ঘুম ভাঙাতে আসত আমায়!

Wednesday, August 16, 2023

Lady Chatterley's Lover: D. H. Lorence



"লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার" এটাই ছিলো ডি.এইচ লরেন্সের লেখা শেষ উপন্যাস। যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৩০ সালে তিনি মারা যান। বইটি প্রকাশের পরেই এর ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। বইটির ওপর নিষেধের বেড়াজাল উঠে গেলে লন্ডনের বিখ্যাত বই বিক্রেতা ‘ডব্লিউ অ্যান্ড জি ফয়েল লিমিটেড ১৫ মিনিটের মাথায় ৩০০ কপি বই বিক্রি করে। লরেন্সের ৩০তম জন্মদিনে পেঙ্গুইন বুকস ২ লক্ষ বই ছাপিয়েছিলো বিক্রির জন্য।

ডি.এইচ লরেন্সের এই আলোচিত উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে বড় পর্দায় একাধিক সিনেমাও নির্মিত হয়েছে।

ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামশায়ার অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে তখনকার উঁচু তলার এক নারী কন্সট্যান্স রিদ (লেডি চ্যাটার্লি) প্রেমে পড়েছিলো বাগানের মালির সঙ্গে। তার স্বামী ক্লিফোর্ড চ্যাটার্লি ইংল্যান্ডের বিত্তবান শ্রেণীর মানুষ ছিলো। কিন্তু সে ছিল পঙ্গু। হুইলচেয়ারে বসে থাকা স্বামী আর অন্যদিকে সুদর্শন মালি- এই দুই চরিত্রের মাঝে লেডি চ্যাটার্লি। 

সেই সময়ে বসে লরেন্স তাঁর উপন্যাসে দেখাতে চেয়েছিলেন শ্রেণী বৈষম্য থাকলেও মালির সঙ্গে মালকিনের প্রেম হতে পারে। আর সেই প্রণয়ে শরীরই প্রধান। তিনি দেখিয়েছেন শুধু মনের কারবারেই প্রেম সীমাবদ্ধ নয়, শরীরের আকর্ষণ মনকেও ছাপিয়ে যায়।

আর এখানে এসেই তৎকালীন সমাজের ছিলো যতো আপত্তি। ভাষায় অশ্লীলতার প্রকাশ এবং নারী-পুরুষের মিলনের বিশদ বিবরণ এই বইটি প্রকাশের বিরুদ্ধে ছিলো বড় বাধা। আর সেই বাধা থেকেই মামলা। ১৯৫৯ সালে ইউরোপে মানুষের চায়ের কাপে আলোচনার ঝড় হয়ে দেখা দেয় এই বই। ৯ জুন জুরি এই বইয়ের মামলায় লরেন্স আর তার অমর উপন্যাসের পক্ষেই শেষ রায় দেন। ১৯৬১ সালে ইংল্যান্ডে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।

লেখা শেষ করার পর ডি. এইচ লরেন্স তাঁর উপন্যাসের নাম দিতে চেয়েছিলেন ‘টেন্ডারনেস’। এই নামে তিনি উপন্যাসটির কিছু জায়গায় সংশোধনের কলম টানেন। সেই সংশোধিত উপন্যাসটিও পরে প্রকাশিত হয়। তবে শেষ পর্যন্ত রয়ে যায় ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’।

বইটি প্রকাশের পরে ছাপার অযোগ্য "লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার" অভিযোগের তীরটা এমনই ছিলো। ১৯৬০ সালের আগে এই বইটি ইংল্যান্ডে প্রকাশ্যে বিক্রি করার অনুমতি পাওয়া যায়নি। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ডি. এইচ. লরেন্স যৌনতাকে পুঁজি করে এই উপন্যাস রচনা করেছেন, এই অভিযোগে প্রকাশনা সংস্থা ‘পেঙ্গুইন বুকস’-কে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান আর ভারতে দীর্ঘ সময় ধরে নিষিদ্ধ ছিলো এই বই। কিন্তু মামলায় জেতার পর লেডি বইটির এক মিলিয়ন কপি নিঃশেষ হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র:
নেট, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস
ছবিঃ গুগল
উপরোক্ত লেখাটি সংগৃহীত 

Wednesday, August 9, 2023

মনের বারান্দায়: নির্বাচিত কবিতা সংকলন ।। রবি রায়





তোমারি আলোতে আলোকিত অনিকেত

তোমার বন্ধ মনের দুয়ারে দাঁড়ায়ে আছে আজো, আশিতেও অবিরত, তোমারি অপেক্ষায়। 

-রবি রায়


তুমি কি...

🖤

তুমি কি আগের মতোই আমার কথা আজো ভাব, কখনো হঠাৎ দেখা হলে আগের মতোই কি অনেক দিনের জমে থাকা তোমার আদর আবার ফিরে পাব?

তোমার মাথাভরা কুচকুচে সেই কালো চুলের ধারা আজো কি মাটি ছুঁয়ে যায়,
দেখা হলে আমি কি হারিয়ে যাব এখনো
তোমার এলোমেলো সেই সুরভিত চুলের ধারায় এক লহমায়?

তুমি কি আজো দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাক আমারি প্রতীক্ষায়- এমনটা ভেবে
খুঁজে খুঁজে যদি কোনোদিন গিয়েই পড়ি তোমার খোলা দরজায়, যদি সত্যিই কখনো তেমনি ঘটে যায়, তুমি কি ফিরিয়ে দেবে, প্রিয়, আমায়?

তুমি কি আজো মনে রেখেছো
নগ্নতায় মগ্ন হয়ে সেই তেরাত্রি যাপন, কেটেছিল যেন ঘোরে, কখনো হয়নি মনে ফুটবে আবার ভোরের আলো,
আঁধার যে হতে পারে এতো মনোরম আগে তো অনুভবে তা আসেনি কখনো।

খোলা অঙ্গনে ভেজা কাপড়ে শরীর লেপটে যাওয়া তোমার কতকাল আগের দেখা অপরূপ দৃশ্যশোভা যেন এই সেদিনের মনে হয়, সেই স্মৃতিভারে আজো আমার মন বিভোর হয়ে রয়,
তোমারো কি মন চায়, প্রিয়, সেদিনটা আর একবার ফিরে পাওয়ার মধুময় বাসনায় ?

তোমায় তাহলে বলি শোন মনের কথাটি আমার অতি সংগোপনে, হাঁটছি আমি এখনো, হাঁটছি তোমারি সন্ধানে, হেঁটেই চলেছি, ইচ্ছে শুধু ঘোর এ অমানিশা ভেদি পৌঁছে যেন যাই শেষ বিদায়ের ক্ষণে।

যেখানে বাতাস তোমার শরীরে দোলা দেয়, যে মাটির জল তোমার তৃষ্ণা মেটায়, তোমার শরীর অবগাহনে যেখানে আকাশ ফুঁড়ে বৃষ্টির ফোঁটা নামে, যেখানে গাছগাছালীর ছায়ায় তোমার শরীর শীতল হয়, আমি থাকতে চাই শেষ দিনগুলো সেখানেই, তোমার নরম ছোঁয়ায়।

তোমার জন্যে জেনো আজো আমি ভিজতে পারি অঝোর বৃষ্টিধারায়, 
তোমার জন্যে আজো আমি ভিজতে রাজী অনন্ত জোছনায়।

আদিম আঁধার ঘনিয়ে আসে ক্রমেই মাথার পরে, বলতে পার এই আঁধারে আমি
একলা ফেলে তোমায় যাই কিকরে?

-রবি রায়



তলাস 

🖤

যদি তার খোঁজ পাও কোনোদিন, বলে দিও তারে- আমি তারে ভুলিনি কখনো,
পেতে পারে ফিরে সে আমারে এখনো 
তার নিজ অধিকারে, 
কাঁধে মোর মাথা রেখে 
এখনো সে নির্ভয়ে রাতভর 
দূরপাল্লার চলতি ট্রেনে 
ঘুমিয়ে নিতে পারে, 
যেমনটা সে করেছিল উপভোগ 
অর্ধশত বর্ষ আগে 
কোনো এক নিভৃত রাতে।
আমার মনের গভীরে 
গড়া আছে তিলে তিলে তারি তরে এক সুরম্য মঞ্জিল, ইচ্ছে হলেই 
যেখানে তার প্রবেশের আছে 
অধিকার অবাধ, এমনকি 
এ মাটির মায়া কাটিয়ে 
আমি যদি কালই চলে যাই 
থেকে যাবে তার তরে 
মোর নিজ হাতে গড়া মায়ামঞ্জিল অনন্তকাল
লোকচক্ষুর অন্তরালে মোর হৃদকাননে।

-রবি রায়
২৭/০৭/২০২৩
ছবি সংগৃহীত 

বিরহী 

🖤

তোমাকে চাই -
আজ আর একথা বলার স্পর্ধা 
এ অধমের নাই,
তুমি তো নিজেই একদিন দিয়েছিলে মেলে 
আমাকে তোমার হৃদয়, ফিরে তাকাবার সেদিন আমার হয়নিকো সময়,
একরাশ অভিমানে আহত হৃদয় বিদায় যখন নিলো, রইলো পড়ে স্মৃতি হয়ে শুধু 
লাল গোলাপের পাপড়ি গুলো
বিছানায় এলোমেলো। 
বেলাশেষে আজ বিদায়বেলায় 
সেসব দিনের স্মৃতি 
হাতড়ে বেড়াই, হন্যে হয়ে অবিরত 
খুঁজেই চলি তোমায়,
ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার অতি বিরল আশায়।
-রবি রায়
০৮/০৮/২০২৩

ছবি সংগৃহীত 

আমার হৃদয় কাঁপছে 


তার কলমের আঁচড়ে আমার হৃদয় মাঝে আঁকা হয়ে গেছে এক পশলা অকাল বৃষ্টি,
সে এক নারী, অনিন্দ্য সুন্দরী, প্রকৃতির অকৃত্রিম সৃষ্টি।

হাতখানি তার আঁকড়ে ধরেছে আমার হাত,
লেখনীতে তার আছে যেন এক ঝর্ণাধারা, সতত ধ্বনিত হয় ভালো লাগা গান। 
মনটা আমার তার প্রতি তাই ভরে গেছে ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতায়।

আমার হৃদয় কাঁপছে, কেন জানিনা!
ভাঙাচোরা এ হৃদয় আধারে
একটু জায়গা কি সে পেতে পারে না?
-রবি রায় 
০৯/০৭/২০২৩


ওগো হারিয়ে যাওয়া প্রিয়া,
বলবে না গো আর তোমাকে
ভালোবাসি তোমায়
চিরঘুমে যাবার আগে এ অবুঝ হিয়া 
একটি বারের মতো যদি 
দেখা তোমার পায়।

-রবি রায়




মনে পড়ে যায় 

🖤

শেষের সেদিন পড়ে মনে
আমায় দিলো বিদায়,
বলল শুধু, ফিরে এস,
থাকব প্রতীক্ষায়।
এমনি কোন পারের ঘাটে
শুভ্র বেশে এলোচুলে
বলল যেন অনেক কথা
দুটি চোখের ভাষায়।
নাউয়ে বসে মাঝ দরিয়ায়
প্রথম সেদিন আমার
মনে হলো এলাম ফেলে
নদীর পাড়ে হৃদয়,
অলক্ষ্যে পাষাণে বুঝি
ফুটল সেদিন ফুল।

-রবি রায়
ছবি সংগৃহীত 

মর্মবেদনা 
🖤
কেমন যেন কষ্টে ভুগি এখন,
মনের আয়নায়
বারে বারে দেখা দিয়ে যায় সেই মুখ
যে আমায় পারের খেয়ায়
হাত ধরে দিয়েছিল তুলে 
তার ভরা যৌবনবেলায় 
দিন বদলের দিয়ে দায়।

তারপর কেটে গেল কতকাল, আজ 
হয়তোবা সে কিছু জানতে চায়,
পরাজয়ের গ্লানিতে দগ্ধ হৃদয়,
শয্যাশায়ী আমি চোখ বুজে ভেবে মরি-
জবাবদিহির কিবা উপায়!
-রবি রায়



বেশরম ইচ্ছে
রবি রায়

মাঝে মাঝে বেশরম ইচ্ছে জাগে মনে
কেউ আমার সকালের ঘুম ভাঙ্গাক এই বলে-
হ্যাঁগো, চা খাবে না,
অনেক যে বেলা হয়ে গেছে।
আমি ঘুম চোখে বলি-
আর একটু ঘুমিয়ে নি, চোখ খুলতে পারছিনা।
তারপর ধড়ফড় করে উঠেই পড়ি-
সকাল সাড়ে সাতটার ট্রেনটা ধরতে না পারলে
অপিসের হাজিরাখাতায় লেট সাইন পড়বে,
তিনটে লাল টিক মার্ক মানে মাস ফুরালে একদিনের বেতন কাটা যাবে,
বাজারের থলিতে টান পড়বে।
এখন অবশ্য আর কোন ভুবনের ভার নেই, দায় নেই দায়িত্ব নেই,
সপ্তাহ শেষে বাজার যাওয়া বা রাতে ফেরার পথে বাজার করা নেই,
বাজারের কোন খবরও রাখিনা,
জানিনা কোন ট্রেন কখন এল কখন গেল,
তবুও ভোরের আলো ফুটলেই ঘুম ঘাঙে, কাউকে ডাকতে হয়না,
শীতকালেও ঠাণ্ডা জলে চোখমুখ ধুই,
আগের মত আর বাটিভরা ঈষৎউষ্ণ জল রাখা থাকেনা,
নিজের চা নিজেই বানিয়ে খাই।
তবে আজও যেন অন্য এক ট্রেন ধরার আতঙ্ক তাড়া দেয়,
তাই ভোরে উঠেই বসে যাই ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণায়!
শুধু মাঝে মাঝে ভুল করে বেশরম ইচ্ছে জাগে-
সকালের চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কেউ যদি ভুল করেও ঘুম ভাঙাতে আসত আমায়!

Saturday, August 5, 2023

বাংলা সিনেমার রথী মহারথীদের কথা


অভিনেতা কমল মিত্রের প্রয়ান দিবস ছিল গত ২ আগস্ট (১৯৯৩)।



কমল মিত্র ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি অভিনেতা যিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ৯০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছবি বিশ্বাস (১৯০০ - ১৯৬২) এবং পাহাড়ী সান্যাল (১৯০৬ - ১৯৭৪) সহ তিনি বাংলা সাদা-কালো পর্দায় ৫০ এবং ৬০ এর দশকে অধিকাংশ মধ্যবয়স্ক চরিত্রে আধিপত্য করেছিলেন। তার সফলতা ৭০ দশকেও একইভাবে অক্ষুণ্ণ থাকে। যদিও তিনি উত্তম কুমার এবং তনুজা অভিনীত, ১৯৬৩ সালের জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র 'দেয়া নেয়া'তে, বি.কে.আর. এর ভূমিকার জন্য স্মরণীয় (প্রখ্যাত প্রশান্ত' (উত্তম কুমার), নায়কের বাবা ), কমল মিত্র বিশিষ্ট পৌরাণিক ও সামাজিক কাহিনীতে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। মথুরা এবং ভগবান কৃষ্ণের মাতুলকে নিয়ে চলচ্চিত্র কংসতে, তার 'কংস'-এর চরিত্রে অভিনয়, একটি কিংবদন্তি নেতিবাচক চরিত্রে, একজন অভিনেতা দ্বারা সবচেয়ে শক্তিশালী পারফরম্যান্স হিসাবে গণ্য করা হয়। এই চলচ্চিত্রে তিনি মূল চরিত্রের অন্তরের বেদনা ও বাহ্যিক ক্রোধ ফুটিয়ে তুলেছেন যা আজও অতুলনীয় হয়ে রয়ে গেছে। 

তিনি চলচ্চিত্র কর্মজীবনের শুরুতে সমান দক্ষ ছিলেন, মহিষাসুর বধের চরিত্রে 'মহিষাসুর' চরিত্রে অভিনয় করেন। আত্মোতসর্গ, ভক্তি এবং কঠোর পরিশ্রমের দৃষ্টান্তসরূপ তাকে স্মরণ ও সম্মান করা হয়। লৌহ কপাট (গল্প: জরাসন্ধ; নির্দেশনা: তপন সিনহা) 'বদর মুন্সি'তে তার অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নিজের জন্য চিরস্থায়ী স্থান তৈরি করে নেন।

কমল মিত্রের জন্ম ৯ ডিসেম্বর ১৯১২ সালে, বর্ধমানে। কমল মিত্র অনেক থিয়েটার এবং যাত্রায় (প্রায় ত্রিশটি) অভিনয় করেন। মঞ্চ এবং পর্দাতে তার অনেক শক্তিশালী অভিনয়ের গুণগত বৈশিষ্ট্যটি তার নিয়মশৃঙ্খলা থেকে এসেছিল, যেটি তিনি পেয়েছিলেন স্নাতক হবার পর প্রারম্ভিক বছরগুলিতে সামরিক বাহিনীতে কাজ করা জন্য। তিনি বর্ধমান শহরের খ্যাতনামা মিত্র পরিবারের একজন উৎসাহী খেলোয়াড় ছিলেন এবং অল্প বয়সে একজন ভাল ফুটবলার ছিলেন। চলচ্চিত্র জীবন শুরু করার আগে, তিনি বর্ধমানের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর অফিসে কাজ করেছেন। তিনি একজন উৎসুক পাঠক এবং বিরল বইয়ের একটি সংগ্রাহক ছিলেন। কলকাতায় চলচ্চিত্র কেন্দ্র, চলচ্চিত্র অধ্যয়ন ও চলচ্চিত্র আর্কাইভ নন্দনে তার বিশাল সংগ্রহ দান করেন। তিনি রেডিও-নাটকগুলিতেও অভিনয় করেছিলেন। তার কন্ঠস্বর এবং উচ্চতা উভয়ই দুর্লভ তার দক্ষতায় অতিরিক্ত চমক যোগ করে এবং পর্দায় চরিত্রনির্বিশেষে শ্রোতাদের উপর প্রভাব সৃষ্টি করে। অভিনেতা হিসাবে তার শব্দচয়ন এবং স্বরনিক্ষেপে তার আধিপত্য তাকে অভিনেতা হিসাবে সাফল্যর শীর্ষে নিয়ে যায়। 



তার আত্মজীবনী 'ফ্ল্যাশব্যাক' নামে পরিচিত, সেটি তার অভিনয়ের সাক্ষীর দশকগুলির বাংলা সিনেমার জগতের একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেন এবং সমসাময়িক সমাজের উপর প্রভাব ফেলে এমন একটি মাধ্যম হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রের ধীরে ধীরে আধুনিকীকরণ এবং ক্রমবিকাশের একটি ভাষ্য। তিনি এক সময় (১৯৮১) অভিনয় ছেড়ে দেন, যে সময় প্রযোজক এবং পরিচালক, তার সহকর্মী এবং সাধারণ দর্শকদের কাছে তার অনেক বেশি চাহিদা ছিল।

ছবিতে সপরিবারে কমল মিত্র। 
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া



একাত্তরের জননী

  বর্তমানে বইটি মুদ্রিত নেই   একাত্তরের মা হয়েই আমৃত্যু কাটিয়েছেন।   প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধেও স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন নেননি। একাত্তরের জননী...