এক
বেশ কিছুদিন আগে একটা ভিডিও নজরে এসেছিল। এক বৃদ্ধকে এক জোয়ান ছেলে বাড়ির উঠানে লাঠিপেটা করছে। বৃদ্ধটি ঐ জোয়ান ছেলেটিরই জন্মদাতা পিতা। এই নির্যাতনের কারণ জানা গেল পিতা ছেলের কথামত বিষয়সম্পত্তি ছেলের নামে লিখে না দেওয়া। সম্প্রতি একটি সংবাদ নজরে এল, এক পুত্রসন্তানের পিতৃহত্যার। কারণটা একই। প্রথম ঘটনা ওপার বাংলার এবং দ্বিতীয়টি এপার বাংলার। অর্থাৎ মুখের ভাষা এক দেশ ভিন্ন। জাতধর্ম মনে রাখিনি।
আওরঙ্গজেব ঘরে ঘরে আজো বিরাজমান।
২৮/০২/২০২৩
***
দুই
গত পর্বে অওরঙ্গজেব দিয়ে শেষ করেছিলাম। কিন্তু সম্রাটের যে কাহিনী আমরা সবাই জানি তা তো ইতিহাসে পড়া আর সে ইতিহাস তো প্রধানত ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের দ্বারা রচিত। মুঘলদের সম্পত্তি লুন্ঠনকারী ব্রিটিশদের দেওয়া তথ্য কতটা সত্য আর কতটা জলমিশেল তা আমার মতো স্বল্প শিক্ষিতের পক্ষে বিচার করা কঠিন। তবে সেযুগে যে কোন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাকে বনবাসে যেতে হতো না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। যদি হতো তাহলে ঐতিহাসিক কিছু না কিছু তথ্য সামনে আসতই। বৃদ্ধাশ্রমের কোন কনসেপ্ট'ও তখন জন্মলাভ করেনি।
০১/০৩/২০২৩
***
তিন
বানপ্রস্থ মানে হলো সংসারধর্ম ত্যাগ করে অরণ্যচারী হয়ে ঈশ্বর আরাধনায় রত থেকে জীবনযাপন। আর্য জীবনধারার এটা অন্যতম অঙ্গ বলে বেদাদি গ্রন্থে উল্লেখ আছে শুনেছি। সোজা কথা হলো বয়স বাড়লে, সন্তানসকল বড়ো হয়ে গেলে সাধের বাড়িঘর ছেড়ে বিদেয় হতে হবে। সেসময় পেনসন কনসেপ্ট আমদানি হয়নি, সুতরাং বুড়ো-বুড়ির বাঁচনের দায় ছিল তাদের নিজেদের উপরেই। স্বল্প বুদ্ধিতে একালে বসে বুঝতে অসুবিধা হয় না বুড়ো মা-বাবার ভার আর্যাবর্তে (হিমালয় থেকে বিন্ধ পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায়) পুরাকালেও সন্তানরা নিতে চাইতো না। তাই হয়তো এই মহতী (!) উদ্যোগের সূত্রপাত। একালে তাহাই আমাদের দেশে বহুচর্চিত বৃদ্ধাশ্রমে রূপান্তরিত হয়েছে।
তবে ব্যতিক্রম হয়ত ছিল সেকালে যেমন একালেও আছে।
প্রসঙ্গত, আমার তেমন জানা নেই ভারতীয় এপিক গুলো কোন প্রাসঙ্গিক তথ্য পরিবেশন করে কিনা। দশরথের বা ধৃতরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি বটে তবে পান্ডু মনে হয় বনবাসে গেছিল।
০৩/০৩/২০২৩
চার
এবার একটু গল্প শোনা যাক বুড়ো মা-বাবাকে একালের বৃদ্ধাশ্রমে চালান নিয়ে।
১
বাবা-ছেলের কাহিনী
এবারও অর্কের প্রমোশনটা আটকে গেলো। কারণ সামান্য, পাঞ্জাবী বস একদিন তার বাড়িতে পানভোজন করতে চেয়েছিলেন সেটা আর হয়ে ওঠেনি ! আর হবেই বা কি করে, মা গত হলেও বাবা বহাল তবিয়তে! বউয়ের সঙ্গে আলোচনা করে অর্ক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে হবে। বেশ কটা ছুটির দিনে ঘোরাঘুরি করে পছন্দ হলো সোনারপুরের কাছে মিশনারিদের পরিচালিত একটা হোম। বাবাকে জানাতে নিরুত্তাপ জবাব এলো তোমাদের যদি এতে সুবিধা হয় তাহলে আমার অসুবিধা কোথায় ?
এক রবিবার বাবাকে ছাড়তে সস্ত্রীক পৌঁছে গেল হোমে। রিশেপশনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সইসাবুদ করার সময়েই দেখল বাবা কথা বলছে এক বৃদ্ধ ফাদারের সাথে। ধরন দেখে মনে হলো তারা পূর্ব পরিচিত। অর্ক এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করাতে ফাদার স্মিত হেসে বললেন yes my son আমি এনাকে চিনি। তিরিশ বছর আগে ইনি সস্ত্রীক এসেছিলেন এখানে। নিঃসন্তান থাকায় এক অনাথ শিশুকে এই হোম থেকে দত্তক নিয়ে ফিরে যান..... !
২
মা-ছেলের কাহিনী
এটাও বিদেশি গল্প তবে শুরুটা নচিকেতার সেই বিখ্যাত গানটির মতোই। বাবা মারা যাবার পর বড়ো অফিসার ছেলে মাকে রেখে এলো বৃদ্ধাশ্রমে। কালেভদ্রে দেখা করতে আসে। একদিন দুপুরে হঠাৎ ঐ আশ্রম থেকে ফোন, আপনার মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন। শিগগির আসুন। দামী গাড়িতে ঘন্টাখানেকের মধ্যে সেখানে পৌঁছে দেখে মা সত্যিই একেবারে শেষ মুহূর্তে।
হাজার হোক ছেলে তো, তাই আবেগতাড়িত হয়ে মাথার কাছে টুলে বসে জিজ্ঞেস করলো তোমার কোন শেষ ইচ্ছা টিচ্ছা আছে কিনা ?
কোন রকমে সেই মৃত্যুপথযাত্রিনী বললেন, আশ্রমের ঘরগুলোতে একটা করে ফ্যান লাগিয়ে দিতে। এখানে কোন ঘরেই ফ্যান নেই !
অবাক বিস্ময়ে পুত্ররত্নটি বলে উঠলো, গত বারো বছর ধরে তুমি আছো এখানে। কোনদিনও এনিয়ে অভিযোগ করোনি। আজ যখন কয়েকঘণ্টা মাত্র বাকি তখন কেন....?
ম্লান হেসে বৃদ্ধা বললেন ছোট থেকে গরমে থাকা অভ্যেস ছিলো বাবা, তাই মানিয়ে নিয়েছি। কিন্তু তোমার তো তা নয়। তোমার ছেলেরা যখন একদিন তোমাকে এখানে পাঠাবে, তখন তুমি তো একটা দিনের জন্যও টিকতে পারবে না..... !
ভাষান্তর: ✍🏻©️ স্বপন সেন
-----
প্রথম গল্পটি ইতিপূর্বে একাধিকবার ফেসবুকের পাতায় চোখে পড়েছে। দ্বিতীয়টি এই প্রথম নজরে এল। লেখকের নাম সহ এখানে যুক্ত করলাম। প্রথমটি বর্তমান লেখক মনে হয় আমার ইতিপূর্বে পঠিত লেখাটি নিজের মতো করে সাজিয়েছেন।
-----
উপরের দুটি গল্পই বিদেশী, লেখক তেমনটাই জানিয়েছেন।
এবার আমার স্মৃতি থেকে উদ্ধার করে দুটি কাহিনী দিলাম। এ দুটির পটভূমি কিন্তু স্বদেশীয়।
১
(ক্রমশ)
No comments:
Post a Comment