আমার ফেইসবুকের বিশিষ্ট বন্ধু শ্রী নৃপেন সমাদ্দার একজন পেশাদার নাট্যব্যক্তিত্ব। তাঁর মঞ্চের অভিনয় জীবনের স্মৃতিচারণ তাঁর সম্মতিতে এই ব্লগে সংকলন করে রাখা হচ্ছে।
" বুঝলি ন্যাপা, দুমুঠো ভাত, একটু ডাল, একটু মাছের ঝোল খাবার জন্য, এই ডবল শো,
আবার কল শো -- আর ভালো লাগেনা"
কথাটা মাঝে মাঝেই বলত মিন্টু চক্রবর্তী।
মিন্টুদা অসাধারণ কমেডি অভিনয় করত।
ওনার নাম হয়ত অনেকেই শোনেননি।
কারণ, মিন্টুদা প্রচার পায়নি তেমন ভাবে।
. ..উপরের যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম,
এই কথা মিন্টুদা বলত "শ্রীমান শ্রীমতী" নাটকে, প্রতাপ মঞ্চে, জ্ঞানেশদার পরিচালনাতে।
মিন্টুদাকে প্রথম দেখি "নামজীবন"
নাটকে দর্শক হিসেবে। এই নাটকের পরিচালক ছিলেন সৌমিত্রদা।
সৌমিত্রদা সম্পর্কে মিন্টুদা বলত , "ওরে বাবা, একদম বাঘ, স্টেজে দুপা বেশী হাঁটলেই, গ্রীন
রুমে ধমক খেয়েছি"।
মিস শেফালীর সাথে মিন্টুদার একটা সুসম্পর্ক
ছিল। শেফালীর সম্পর্কেও মিন্টুদার কাছ থেকেই
অনেকে কথা শুনেছি। অনেক দিন বাদে
শেফালীর সাথে আমার পরিচয় হয়।
মিন্টুদা একটু বোহেমিয়ান জীবন পালন করত।
শ্রীমান শ্রীমতী নাটকে অন্যতম অভিনেতা
ছিল আমার বিশেষ বন্ধু প্রয়াত মৃণাল মুখার্জী।
মৃণাল আর ওর স্ত্রী তখন বালীগঞ্জে গেস্ট
হাউসে ভাড়া থাকত। মিন্টুদা মাঝে মাঝেই
মৃণালের ওখানে চলে যেত, রাত কাটিয়ে পরদিন
বেরত।
সময় টা আশির দশকের প্রথম দিক।
মঞ্চ সফল এই নাটক দুশো রজনীর মত
চলেছিল।
এই নাটক শেষ হবার পর আর মিন্টুদার
সাথে দেখা হয়নি।
সাল, তারিখ মনে নেই, মৃণালই আমাকে
জানিয়েছিল, " মিন্টু মারা গিয়েছে, একটা
পুকুরে ওর মৃতদেহ পাওয়া গ্যাছে"। কোনও
মিডিয়া থেকে ,আমি অন্তত খবর টা পাইনি।
নেটে মিন্টুদার কোনও ছবি নেই, আমার কাছেও
ক্যামেরাতে তোলা মিন্টুদার কোনও ছবি নেই।
পোস্টের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নাটকের
শততম রজনীতে সরজুবালা দেবীর উপস্থিতির
ছবিটা দিলাম।
কোনও কোনও বন্ধু মন্তব্য করেন ( সুমন্তব্য)
" এই ধরনের পোস্ট ছোট হয়"
ঠিক বলেন তাঁরা। কারণ, টেকনিসিয়ান থেকে
পরিচালক পর্যন্ত যাঁদের সম্পর্কে পোস্ট
করেছি, তাঁদের যতটুকু দেখেছি, সেইটুকই
লিখেছি।
২৩. ১১. ২০২৩
🧔
"ভোগ খাওয়া মানে দুর্ভোগ, অম্বল, ঢেকুর"
সংলাপটা ছিল সুনীলদার ( মুখার্জী)।
নাটক, "জোয়ার ভাটা"। রঙ্গনা। ২০০০৴২০০১সাল।
এই নাটকটাই উত্তর কলকাতার পেশাদার মঞ্চের শেষ নাটক।
সুনীলদা এর আগে কোনও থিয়েটারে
অভিনয় করেছেন কিনা জানা নেই।
কিন্ত বহু ছবিতে দাপটের সাথে অভিনয় করতে দেখেছি।
একবার একটা ছোট ছবির সুটিংয়ে হঠাৎ চীৎকার করে বললেন, "এটা কি মাছের বাজার? এত কথা কেন?"
চারদিক চুপচাপ। সুনীলদাকে এর আগে আমি অন্তত জোরে কথা বলতে শুনিনি।
১৯৯৭\৯৮ সালে "প্রেম যমুনা" নামে তিন দিক খোলা মঞ্চের নাটকে অভিনয় করতে রাজী হবার পর আমার সাথে দেখা হোল।
বললেন, "তুই একটু বলে দিস, আমি পারবনা, টাকার দরকার খুব, কিন্ত এতদিন লম্বা বাসে যাতায়াত আমার শরীরে দেবেনা"।
সন্তোষপুরে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। খুব সাধারণ পোষাক পড়তেন।
আর্থিক অভাব ছিল ওনার নিত্যসঙ্গী।
দু'হাজার বার সাল নাগাদ টি বি তে আক্রান্ত হোয়ে যাদবপুর হাসপাতালে ইহলোক ত্যাগ করেন।
বিশেষ কোনও স্মরণ সভার আয়োজন কোনও সংগঠন করেছিল কিনা জানা নেই। নিঃশব্দে মানুষ টা চলে গেলেন।
*****
সুনীল মুখোপাধ্যায়
সুনীল মুখোপাধ্যায় ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ - মে, ২০১২) একজন বাঙালি চলচ্চিত্র ও মঞ্চ অভিনেতা।
অভিনয়:
অভিনেতা ও পরিচালক উৎপল দত্তের নাট্যদলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সুনীল মুখোপাধ্যায়। পরে পরিচালক মৃণাল সেনের কলকাতা ৭১ ছবিতে প্রথম কাজ করেন। কিন্তু এই ছবিতে তার অভিনয়ের জায়গাটি সম্পাদনায় বাদ যায়। পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের নিম অন্নপূর্ণা ছবিতে তিনি মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করে পরিচিতি পান। মূলত চাকর, মাতাল, চোর ইত্যাদি প্রান্তিক চরিত্রে অভিনয় করতেন তিনি। ঋতুপর্ন ঘোষের প্রথম সিনেমা হীরের আংটিতে চোরের ভূমিকায় অভিনয় করেন। অজস্র বাংলা ছবি ও টেলিভিশন সিরিয়াল ও মঞ্চে তিনি সহ অভিনেতার কাজ করেছেন৷ ৯০ দশকে মনোজদের অদ্ভুত বাড়ী বাংলা টেলিসিরিজে তিনি গোয়েন্দা বরদাচরণের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
অমৃত কুম্ভের সন্ধানে, খারিজ, পার, আবার অরণ্যে, কালবেলা, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার, পদ্মানদীর মাঝি, তাহাদের কথা, বোস, দ্য ফরগটেন হিরো ইত্যাদি সিনেমার পাশাপাশি মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবিতে নিয়মিত অভিনয় করতেন। ক্যালকাটা পিপলস আর্ট থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুনীল মুখোপাধ্যায়। ফেরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বেস্ট সাপোর্টিং রোলের পুরস্কার পান তিনি।
মৃত্যু:
আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে, টিবি রোগাক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের মে মাসে সুনীল মুখোপাধ্যায় কলকাতায় মারা যান।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
"ভায়া, আমি একটু সেবন করব" -নৃপতিদা বলেছিলেন রাত একটা নাগাদ একজনের ঘরে বসে।
ঘটনাটা সত্তর দশকের প্রথম দিকে।
কাঁচরাপাড়ার একটা অনুষ্ঠানে দুজনেই গিয়েছিলাম। রাত এগারোটা নাগাদ অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় শিল্পীরা বাড়ি চলে যান। আমাদের দু'জনের স্থান হল এক কর্মকর্তার বাড়িতে।
ওনার কথার উত্তর দিতে পারিনি। কারণ, আমি এক বিস্ময়ে বিমূঢ় তখনও!
ওনার বহু ছবি দেখে আমি মুগ্ধ, তার সাথে এক ঘরে!!
ঘুমিয়ে পড়ার আগে উনি কিছু কথা বলেছিলেন। সবটাই ছবি বিশ্বাস সম্পর্কে।
এর আগে দু'একবার স্টুডিওতে গিয়েছিলাম, নৃপতিদাকে দেখেছিলাম।
কেউ ডাকছে, "প্রভু", কেউ "প্রভুদা"।
ভোর রাতে আমাকে ডেকে বললেন,
"চলি ভাই, ট্রেন ধরে শিয়ালদহ, তারপর বাস।
ন'টাতে কল টাইম"।
এরপর আর ওনার সাথে দেখা হয়নি।
সম্ভবত ১৯৭৪\৭৫ সালে নৃপতিদা (প্রভু) ইহলোক ত্যাগ করেন। খবরটা লোকমুখে শুনেছিলাম। কোনও মিডিয়া থেকে পাইনি।
এই খবর প্রচারের অধিকারী হয়ত নৃপতিদা ছিলেননা।
২০/০৯/২০২৩
নৃপতি চট্টোপাধ্যায় (১৯০৭ - ২৭ মে, ১৯৭৫) ছিলেন একজন বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা। তিনি কিশোর কন্যা (১৯৬১), বানু পেলো লটারি (১৯৫৮) এবং দুই বাড়ি (১৯৬৩) এর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত। তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল দীপান্তর।
নৃপতি চট্টোপাধ্যায় অধুনা বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল ভূপতি চট্টোপাধ্যায়। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল থেকে বিদ্যালয় শিক্ষা সমাপ্ত করেন তিনি। দ্বীপান্তর নামক চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে তার অভিনয় জীবনের শুরু।
তিনি ১৯৭৫ সালের ২৭ মে ভারতে মৃত্যুবরণ করেন।
- মোহনবাগানের মেয়ে (১৯৭৬)
- রাগ অনুরাগ (১৯৭৫)
- বিসর্জন (১৯৭৪)
- দেবী চৌধুরানী (১৯৭৪)
- মৌচাক (চলচ্চিত্র) (১৯৭৪)
- বিন্দুর ছেলে (১৯৭৩)
- নতুন দিলের আলী (১৯৭৩)
- পদীপিসির বর্মি বাক্স (১৯৭২)
- শেষ পর্ব (1972)
- বিরাজ বৌ (1972)
- ধন্যি মেয়ে (1971)
- বিবাহ বিভ্রাট (1971)
- এই করেছ ভাল (1970)
- নিশি পদ্ম (1970)
- গুপী গাইন বাঘা বাইন (1969)
- আদ্যাশক্তি মহামায়া (1968)
- আপনজন (1968)
- কখোনো মেঘ (1968)
- বালুচরী (1968)
- চিড়িয়াখানা (চলচ্চিত্র) (1967)
- নায়িকা সংবাদ (1967)
- অ্যান্টনি ফিরিংগি (1967)
- মিস প্রিয়ংবদা (1967)
- Ghoom Bhangar Gaan (1965)
- Hasi Shudhu Hasi Noy (1963)
- দুই বাড়ী (1963)
- দেয়া নেয়া (1963)
- Sathi Hara (1961)
- Maa (1961)
- Kathin Maya (1961)
- তিন কন্যা (1961)
- Bishey (segment "Postmaster") (as Nripati Chattopadhyay)
- Maya Mriga (1960)
- Raja-Saja (1960)
- Suno Baranari (1960)
- Prabesh Nishedh (1960)
- Pushpadhanu (1959)
- Personal Assistant (1959)
- Agnisambhabha (1959)
- Gali Theke Rajpath (1959)
- Derso Khokhar Kando (1959)
- Janmantar (1959)
- লুকোচুরি (1958)
- বাড়ী থেকে পালিয়ে (1958) as Feriwala
- Rajlakshmi O Srikanta (1958)
- ভানু পেল লটারি (1958) as Haladhar Halder
- কাবুলিওয়ালা (১৯৫৭-এর চলচ্চিত্র) (1957)
- Punar Milan (1957)
- Harjit (1957)
- Daner Maryada (1956) as Servant
- Subhalagna (1956)
- Saheb Bibi Golam (1956)
- Aparadhi (1955)
- Du-janay (1955)
- Sajghar (1955)
- Shap Mochan (1955)
- Shreebatsa Chinta (1955)
- Upahar (1955)
- Bhangagara (1954)
Nilamoni's father (Pratibha's brother in law) (as Nripati Chattopadhyay)
- Dukhir Imaan (1954)
- Grihapravesh (as Nripati Chattopadhyay)(1954)
- Moner Mayur (1954)
- Sadanander Mela (as Nripati Chattopadhyay) (1954)
- Bidhilipi (1954)
- Naramedh Yagna (1954)
- Jog Biyog (1953)
- Lakh Taka (1953)
- Darpachurna (1952)
- Digbhranta (1950)
- Mejdidi (1950)
- Maryada (1950)
- Kavi (as Nripati Chattopadhyay)(1949)
- Niruddesh (1949)
- Banchita (1948)
- Dhatri Debata (1948)
- Mandir (1946)
- Bhabhi Kaal (1945)
- Kato Door (1945)
- Bideshini (1944)
- Chhadmabeshi (1944)
- Dampati (1943)
- Devar (1943)
- Priya Bandhabi (1943)
- Avayer Biye (1942)
- Milan (1942) as Patient
- Epar Opar(1941) as Pandit
- Kavi Joydev (1941)
- Byabadhan (1940) as Mr. Dutta
- Nimai Sanyasi (1940) as Lambodar
- Rikta (1939) as Chiranjit
- Muktisnan (1937)
✍️
সময়টা ১৯৯৪।
'করিতকর্মা' নাটক সারাকারিনাতে।
একটে ঘরে শম্ভুদার সাথে বসতাম।
-"আজ কী খেলে"?
-" ভাত, সোনা মুগের ডাল, মাছ, মাংস"
খুব খাদ্যরসিক ছিলেন শম্ভুদা।
মাঝে মাঝেই অন্য অভিনেতা/অভিনেত্রী যোগ দিতেন।
বেশ চলছিল, হঠাৎ ছন্দপতন।
জনৈক অভিনেতা, মদ্যপ অবস্থাতে হলে আসে।
শো তো বন্ধ হোলই।
সারকারিণাতে কাউকে মহলা করিয়ে স্থির করা গেলনা।
আগে জানতাম না, পরে দেখেছি, শম্ভুদার একট পা গোড়ালি থেকেই কাটা। মঞ্চে সবসময়ই জুতো পড়ে উঠতেন।
যাইহোক, নাট্যকার/পরিচালক অমর ঘোষ 'করিতকর্মা'র শেষ রজনী অসময়ে ঘোষনা করতে বাধ্য হন।
শেষ দিনে, শম্ভুদা একটা কাগজে ওনার ঠিকানা লিখে যেতে বলেন।
কমাস বাদেই দমদম অঞ্চলে ওনার বাড়ীতে গিয়েছিলাম।
শম্ভুদা বিপত্নীক ছিলেন। ছেলেও একটু বড় হোয়েছে, সে তার জীবন নিয়ে আছে। কর্মহীন শম্ভুদাকে খুব অসহায় লাগল।
বোধহয় দুহাজার আঠেরতে শম্ভুদার শেষ খবর হয়, সেটাও তেমন প্রচারে আসেনি।
"করিতকর্মা হওটাও অবশ্যই একটা আর্ট "
১৯/০৮/২০২৩
"আজ জোৎস্না রাতে সবাই গ্যাছে বনে"
রবিঠাকুরের এই গানটা ব্যবহার করা হয়েছিল 'কীর্তিগড়ে কেলেঙ্কারি' নামে নিয়মিত থিয়েটারে সমীর মজুমদারের পরিচালনাতে।
অভিনেত্রী ছিলেন সুলতাদি(চৌধুরী)।
না, রবিঠাকুরের সম্পর্কে কিছু লিখছিনা।
সময়টা আশির দশকের মাঝামাঝি।
দার্জিলিঙের ম্যালে মনে হোল দূরে বেঞ্চে বসা কোনও পরিচিতা। কাছে গিয়ে দেখি- সুলতাদি।
"দিদি, তুমি এখানে? বেড়াতে এসেছ?"
"কে? নৃপেন?-- হ্যাঁ, বেড়াতেই, পাকাপাকি,
বাজারে একটা দোকান দিয়েছি"।
সুলতাদির শাড়ীটা ছিল মলিন, মুখে ক্লান্তির ছাপ।
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কি বেড়াতে এসেছ"?
মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বললাম, " হ্যাঁ"।
সমীরদার কাছে শুনেছিলাম, সুলতাদি উৎপল দত্তের দলে কিছুদিন থিয়েটারের কাজ কোরেছিলেন।
অজস্র ছবিতে সুলতাদির অভিনয় দেখেছি।
নব্বই দশকের শেষ দিকে অভিমানী তারকা নিঃশব্দে তারা হোয়ে চলে গেলেন মহাকাশে।
সত্তর দশকে 'কীর্তিগড়ে কেলেঙ্কারি' নাটক শেষ হবার পর আশির দশকে দার্জিলিঙের ম্যালে শেষ দেখা হোল সুলতাদির সাথে।
০৮/০৮/২০২৩
*
সাল-তারিখ মনে নেই।
ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে হঠাৎ সামনে এসে এক
ভদ্রলোক বললেন, "আপনি কি অভিনয় করেন?,
এখন কোথায় করছেন?"
তাকিয়ে দেখি সন্দীপ রায়।
বললাম, "এখন জ্ঞানেশদার পরিচালিত
নিয়মিত থিয়েটারে আছি"
"ব্যস, আপনি একটু ঐ ঘরটাতে বসুন, আমি
মিনিট দশেক বাদেই উনি এলেন।
আমাক বললেন, "বাবার একটা ছোট গল্প
নিয়ে একটা খুব ছোট ছবি বানাব।
"শেয়াল দ্যাবতা রহস্য"। আপনি অভিনয়
করবেন? মোট তিন দিনের সুটিং, আপনাকে
দুদিন লাগবে। সংলাপ খুব কম। সাইলেন্ট
সট বেশ কিছু নেব।"
বললাম, "অন্য কেউ বললে না বলতাম,
কিন্তু আপনার কাছে আমি অভিনয় করব।
কারণ, আপনি সন্দীপ রায়।"
দিন দশেক বাদেই, দুদিনের সুটিং করলাম।
নিজের হাতেই পারিশ্রমিক যেটা দিলেন-
তা আশাতীত।
সব থেকে বিস্মিত হলাম, দুদিন লাঞ্চ ব্রেকে
ওনার মা বিজয়া রায় আর স্ত্রী নিজেদের
হাতে পরিচালক থেকে টেকনিসিয়ান-
সবাইকে এক জায়গায় পরিবেশন করলেন।
সত্যজিত রায়কে আমি দেখিনি। সৌমিত্র
দার কাছে শুনেছিলাম- ওনার বাড়ীতে কেউ
গেলে উনি নিজেই দরজা খুলতেন।
এই মানবিক বোধ পরিবারের মধ্যে এখনও
প্রবহমান।
একটা উক্তি মনে পড়ল, "ফলযুক্ত গাছ
ঝুঁকে থাকে, ফলহীন গাছ সোজা দাঁড়িয়ে
থাকে"।
না, আজ সন্দীপ রায়ের জন্মতারিখ না।
মনে পড়ল। লিখে ফেললাম।
১৪ জুলাই ২০২৩
দুহাজার আট সালের নয়ই মে ছুটলাম রবীন্দ্র সদনে।
জ্ঞানেশ দার নীথর দেহ শায়িত।
পরিচিতদের মধ্যে পেলাম উৎপল দা (রায়), রমেন আর শুভেন্দুদাকে।
আগের দিন নিফাতে আসার পথে জীবনাবসান হয়।
অনেক পরিচালকের সান্নিধ্য পেয়েছি--
কিন্তু জ্ঞানেশদা প্রধান।
আশির দশকে 'চারপ্রহর' নাটক আর 'জীবনতৃষ্ণা' নামে তিনদিক খোলা মঞ্চের নাটকে ওনার সাথে প্রথম সুযোগ। এ ছাড়াও একাধিক নাটকে আমাকে উনি ডাকেন।
একটু বেশী প্রশ্রয় পেয়েছিলাম আমি।
আমার অনুরোধে আগরপাড়া/সোদপুর অঞ্চলে একাধিক অনুষ্ঠানে চলে এসেছেন।
খুব সাদামাটা জীবন যাপন করতেন।
আট সালের মার্চ/এপ্রিল নাগাদ আমাকে
নিফাতে ডেকে পাঠান। গেলাম।
বললেন, "বাবলু এসেছিল, আমার নাকি
সিরিয়ালের একটা রোল আছে, হ্যা/ না
কিছুই বলিনি; আসলে স্টুডিওতে ঢুকতেই লজ্জা পাই, সহ অভিনেতা/অভিনেত্রীর কাছ থেকে সামান্য সম্মান পাইনা।"
"যাকগে, তুমি কিছু ছোট ছোট স্ক্রিপ্ট তৈরী করতো, পূজোর পর ঘুড়ে ঘুড়ে অভিনয় করব পথে পথে, হলত সব বন্ধ।
তারপর আর দেখা হয়নি।
আটই মে, আট সালে ওনার দেহাবসান
হোয়েছে- কিন্তু আমার কাছে উনি রোজ জীবিত। ।
হ্যাঁ, পাঁচ তারিখ ওনার জন্মতারিখ।
July 5, 2023